সংকল্প সহায়তার

সংকল্প সহায়তার


সকল অসহায়দের পাশে সহায়তার আহ্বান....

সত্যিকারের ভালবাসার সুন্দর দৃষ্টান্ত......


আব্বা আম্মার বিয়ের পর আব্বা একটা কাজ প্রতি শুক্রবারে করত। সেটা হল প্রতি শুক্রবারে আম্মা গোসল করে আব্বার সামনে বসত , আর আব্বা অনেক যত্ন করে আম্মাকে চুল আচরে দিত, তেল দিয়ে দিত, ঝুটি করে দিত। পায়ে আলতাও লাগিয়ে দিত। কাজটা আব্বা অনেক সময় নিয়ে করত। বাড়ির উঠোনে মাদুর পেতে। পাশে ক্যাসেট প্লেয়ারে বাংলা সিনেমার গান বাজত। পুরো সপ্তাহের সে সময়টায় আম্মা হয়ে যেত আব্বার জন্য কাদা ,আব্বা সে একতাল কাদা দিয়ে প্রতিমা বানাত। তো একবারের ঘটনা বলি 
.
সেবারের ভয়াবহ সাইক্লোনের কথা। আব্বা তখন চট্টগ্রাম চাকরি করে আর আমরা থাকি ফেনীতে। আমার বয়স চার বছর তখন। সাইক্লোনের রাতটা ছিল ভয়ঙ্করতম একটা রাত। প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে আব্বা আসত। শুক্রবার থেকে চলে যেত। কিন্তু সেদিন রাতে সাইক্লোনের কারণে আব্বা আসবেনা এটা শিওর্। আমরা সবাই রেডিওতে শুনছি সাইক্লোনের খবর্। সাত নম্বর বিপদ সংকেত ,আট নাম্বার বিপদ সংকেত। নোয়াখালী উপকূলে নাকি লাখো মানুষ মারা গেছে। আমি দাদা দাদির মাঝখানে বসে আছি। যদি সাইক্লোন নিয়ে যায়। রাতের বাজে এগারোটা। হঠাত দরজায় ঠক ঠক। কে এতো রাতে?
.
দাদা বলল ঝড়ের রাতে নাকি ডাকাত পড়ে। বৃষ্টির শব্দে ওপাশের মানুষটা কি বলছে বুঝা যাচ্ছে না। একটু পর ভয়ে ভয়ে দাদা দরজা খুলল। কাকভেজা হয়ে দাড়িয়ে আছে আব্বা। আম্মার চোখ তো কপালে 
- তুমি না আসবেনা 
- কালকে না শুক্রবার 
-কিভাবে এসেছ
- বাস পাইনি। ট্রাকের সামনে বসে চলে এসেছি 
- তুমি কি পাগল 
- আমি না আসলে তোমায় খোপা করে দেবে কে ?
তখন বুঝিনি বড় হওয়ার পর প্রায়ই ভাবি আব্বার এই পাগলামীটার কথা। আট নাম্বার সিগন্যালের ঝড়ের রাতে এক ত্রিশোর্ধ্ব যুবক ট্রাকের সামনে চেপে বাড়ি যাচ্ছে কারণ সে প্রতি শুক্রবারে তার সহধর্মিনীকে পায়ে আলতা পড়িয়ে দেয়...আমাকে কখনো কেউ যদি ভালোবাসার মহাকাব্য শুনাতে বলে আমি রোমিও জুলিয়েট বা বলিউডি চরম রোমান্টিক সিনেমার ধারে কাছে না গিয়ে আব্বা আম্মার এই ঘটনাটা শুনাই। ভালোবাসা হবে এমন সহজ সরল সোজা সাপ্টা। 
.
গল্পটা বললাম কিছুদিন আগে আমার এক বন্ধু আমার কাছে আইডিয়া চেয়ে বসল 
- দোস্ত প্রপোজ কি দিয়ে করলে ভাল হবে 
- মানে 
- আজকাল নাকি রিং টিং পড়িয়ে প্রপোজ করার ফ্যাশন চলছে
- তোর মন কি চাইছে 
- ইয়ে না মানে হাল ফ্যাশনে চলত হইব তো 
.
ভালোবাসায় আবার ফ্যাশন কিরে। ভালোবাসা হবে স্বতস্ফুর্ত যার যার মনের মত। পৃথিবীতে ছয়শ কোটি মানুষের ফিঙ্গারপ্রিন্ট যেমন ছয়শ কোটি রকম ,তেমনি প্রত্যেকটা মানুষের ভালোবাসাটাও হবে আলাদা আলাদা ইউনিক। 
.
যেমন আমার দাদার প্রতি আমার দাদির ভালোবাসা ছিল নিজের হাতে স্যুয়েটার সেলান। সারাবছর দাদী কুশিকাটা দিয়ে অল্প অল্প করে সে স্যুয়েটারটা বানাত যাতে শীত আসলে দাদা সেটা পড়তে পারে। একবার দাদার ভাই মারা গেল। সারা বাড়িতে বিলাপ। দাদীও কাদতেসে। কাদতে কাদতেও স্যুয়েটার সেলাচ্ছে। সামনে শীত,দাদার গায়ে নতুন স্যুয়েটার উঠা লাগবে...মানে সাবকনশাস মাইন্ডে দাদীর এটা একদম গেথে গেছে
.
আমার দাদী ছিল অশিক্ষিত। ইন্সটাগ্রাম ফেসবুকে তো দূরে থাক মোবাইলও বুঝত না। টিভি দেখত না। কিন্তু আমার দাদার প্রতি দাদির ভালোবাসা প্রকাশের এই আইডিয়াটা দাদিকে এয়ারটেলের নাটক কিংবা ফেসবুকের কোন কাপল কে দেখে নিতে হয়নি। ওয়ান পিস মেড আইডিয়া ছিল। নিজ মাথা থেকে যা বের হয়েছে সেটাই 
.
আবার আব্বাকেও কোন নাটক কিংবা চলতি ফ্যাশনের কিছু থেকে প্রতি শুক্রবারে আম্মাকে চুলে তেল মেখে দেয়ার আইডিয়া নিতে হয়নি 
.
বাঙ্গালী মধ্যবিত্ত চিরকালই এমন রোমান্টিক ছিল। উল্টো এইসব খুচরো গল্পকে নাটকে ধারণ করেছে অনেকে। প্রেম করা ভালোবাসা শেখার জন্য বাঙ্গালীর টোয়াইলাইট ,প্রাচ্যের ফ্যাশন ,কিংবা কোন আল্ট্রামডার্ন কাপল কি করে সেইখানে যেয়ে খুজা লাগেনা। 
.
ভালোবাসা থাকে দাদির কাটার প্রতিটা সূতোর প্যাচে 
ভালোবাসা থাকে স্ত্রীকে আলতা পরাতে ঝড়ের রাতে ছুটে যাওয়া যুবকের ভেজা চুলে 
সেই ভালোবাসার ঠিকানা খুজে পাক ছেলে মেয়েরা। 
.
ভালোবাসা হোক যেমন তেমন। স্পেশাল কিছুই না। পরনের সবচেয়ে সাধারণ জামাটা। সারাদিন স্যুট ব্যুট পড়ে থাকলেও রাতে যে জামাটা না পড়লে ঘুম আসেনা। ভালোবাসা হোক সাধারণ কিছু। অক্সিজেনের মত। যার অস্তিত্বের কথা কেউ বলেনা কিন্তু যা না থাকলে জীবন চলেনা। ভালোবাসা আসুক বোকা প্রেমিকের আহাম্মক আইডিয়া হয়ে ,ভালোবাসা ঝড়ুক উজবুক মেয়েটার কিম্ভুত চিন্তা ধরে। ভালোবাসা হোক ইউনিক ,একদম অরিজিনালআব্বা আম্মার বিয়ের পর আব্বা একটা কাজ প্রতি শুক্রবারে করত। সেটা হল প্রতি শুক্রবারে আম্মা গোসল করে আব্বার সামনে বসত , আর আব্বা অনেক যত্ন করে আম্মাকে চুল আচরে দিত, তেল দিয়ে দিত, ঝুটি করে দিত। পায়ে আলতাও লাগিয়ে দিত। কাজটা আব্বা অনেক সময় নিয়ে করত। বাড়ির উঠোনে মাদুর পেতে। পাশে ক্যাসেট প্লেয়ারে বাংলা সিনেমার গান বাজত। পুরো সপ্তাহের সে সময়টায় আম্মা হয়ে যেত আব্বার জন্য কাদা ,আব্বা সে একতাল কাদা দিয়ে প্রতিমা বানাত। তো একবারের ঘটনা বলি 
.
সেবারের ভয়াবহ সাইক্লোনের কথা। আব্বা তখন চট্টগ্রাম চাকরি করে আর আমরা থাকি ফেনীতে। আমার বয়স চার বছর তখন। সাইক্লোনের রাতটা ছিল ভয়ঙ্করতম একটা রাত। প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে আব্বা আসত। শুক্রবার থেকে চলে যেত। কিন্তু সেদিন রাতে সাইক্লোনের কারণে আব্বা আসবেনা এটা শিওর্। আমরা সবাই রেডিওতে শুনছি সাইক্লোনের খবর্। সাত নম্বর বিপদ সংকেত ,আট নাম্বার বিপদ সংকেত। নোয়াখালী উপকূলে নাকি লাখো মানুষ মারা গেছে। আমি দাদা দাদির মাঝখানে বসে আছি। যদি সাইক্লোন নিয়ে যায়। রাতের বাজে এগারোটা। হঠাত দরজায় ঠক ঠক। কে এতো রাতে?
.
দাদা বলল ঝড়ের রাতে নাকি ডাকাত পড়ে। বৃষ্টির শব্দে ওপাশের মানুষটা কি বলছে বুঝা যাচ্ছে না। একটু পর ভয়ে ভয়ে দাদা দরজা খুলল। কাকভেজা হয়ে দাড়িয়ে আছে আব্বা। আম্মার চোখ তো কপালে 
- তুমি না আসবেনা 
- কালকে না শুক্রবার 
-কিভাবে এসেছ
- বাস পাইনি। ট্রাকের সামনে বসে চলে এসেছি 
- তুমি কি পাগল 
- আমি না আসলে তোমায় খোপা করে দেবে কে ?
তখন বুঝিনি বড় হওয়ার পর প্রায়ই ভাবি আব্বার এই পাগলামীটার কথা। আট নাম্বার সিগন্যালের ঝড়ের রাতে এক ত্রিশোর্ধ্ব যুবক ট্রাকের সামনে চেপে বাড়ি যাচ্ছে কারণ সে প্রতি শুক্রবারে তার সহধর্মিনীকে পায়ে আলতা পড়িয়ে দেয়...
.
আমাকে কখনো কেউ যদি ভালোবাসার মহাকাব্য শুনাতে বলে আমি রোমিও জুলিয়েট বা বলিউডি চরম রোমান্টিক সিনেমার ধারে কাছে না গিয়ে আব্বা আম্মার এই ঘটনাটা শুনাই। ভালোবাসা হবে এমন সহজ সরল সোজা সাপ্টা। 
.
গল্পটা বললাম কিছুদিন আগে আমার এক বন্ধু আমার কাছে আইডিয়া চেয়ে বসল 
- দোস্ত প্রপোজ কি দিয়ে করলে ভাল হবে 
- মানে 
- আজকাল নাকি রিং টিং পড়িয়ে প্রপোজ করার ফ্যাশন চলছে
- তোর মন কি চাইছে 
- ইয়ে না মানে হাল ফ্যাশনে চলত হইব তো 
.
ভালোবাসায় আবার ফ্যাশন কিরে। ভালোবাসা হবে স্বতস্ফুর্ত যার যার মনের মত। পৃথিবীতে ছয়শ কোটি মানুষের ফিঙ্গারপ্রিন্ট যেমন ছয়শ কোটি রকম ,তেমনি প্রত্যেকটা মানুষের ভালোবাসাটাও হবে আলাদা আলাদা ইউনিক।যেমন আমার দাদার প্রতি আমার দাদির ভালোবাসা ছিল নিজের হাতে স্যুয়েটার সেলান। সারাবছর দাদী কুশিকাটা দিয়ে অল্প অল্প করে সে স্যুয়েটারটা বানাত যাতে শীত আসলে দাদা সেটা পড়তে পারে। একবার দাদার ভাই মারা গেল। সারা বাড়িতে বিলাপ। দাদীও কাদতেসে। কাদতে কাদতেও স্যুয়েটার সেলাচ্ছে। সামনে শীত,দাদার গায়ে নতুন স্যুয়েটার উঠা লাগবে...মানে সাবকনশাস মাইন্ডে দাদীর এটা একদম গেথে গেছে
.
আমার দাদী ছিল অশিক্ষিত। ইন্সটাগ্রাম ফেসবুকে তো দূরে থাক মোবাইলও বুঝত না। টিভি দেখত না। কিন্তু আমার দাদার প্রতি দাদির ভালোবাসা প্রকাশের এই আইডিয়াটা দাদিকে এয়ারটেলের নাটক কিংবা ফেসবুকের কোন কাপল কে দেখে নিতে হয়নি। ওয়ান পিস মেড আইডিয়া ছিল। নিজ মাথা থেকে যা বের হয়েছে সেটাই 
.
আবার আব্বাকেও কোন নাটক কিংবা চলতি ফ্যাশনের কিছু থেকে প্রতি শুক্রবারে আম্মাকে চুলে তেল মেখে দেয়ার আইডিয়া নিতে হয়নি 
.
বাঙ্গালী মধ্যবিত্ত চিরকালই এমন রোমান্টিক ছিল। উল্টো এইসব খুচরো গল্পকে নাটকে ধারণ করেছে অনেকে। প্রেম করা ভালোবাসা শেখার জন্য বাঙ্গালীর টোয়াইলাইট ,প্রাচ্যের ফ্যাশন ,কিংবা কোন আল্ট্রামডার্ন কাপল কি করে সেইখানে যেয়ে খুজা লাগেনা। 
.
ভালোবাসা থাকে দাদির কাটার প্রতিটা সূতোর প্যাচে 
ভালোবাসা থাকে স্ত্রীকে আলতা পরাতে ঝড়ের রাতে ছুটে যাওয়া যুবকের ভেজা চুলে 
সেই ভালোবাসার ঠিকানা খুজে পাক ছেলে মেয়েরা। 
.
ভালোবাসা হোক যেমন তেমন। স্পেশাল কিছুই না। পরনের সবচেয়ে সাধারণ জামাটা। সারাদিন স্যুট ব্যুট পড়ে থাকলেও রাতে যে জামাটা না পড়লে ঘুম আসেনা। ভালোবাসা হোক সাধারণ কিছু। অক্সিজেনের মত। যার অস্তিত্বের কথা কেউ বলেনা কিন্তু যা না থাকলে জীবন চলেনা। 
.
ভালোবাসা আসুক বোকা প্রেমিকের আহাম্মক আইডিয়া হয়ে ,ভালোবাসা ঝড়ুক উজবুক মেয়েটার কিম্ভুত চিন্তা ধরে। ভালোবাসা হোক ইউনিক ,একদম অরিজিনাল
.
বকুল

No comments

Theme images by tjasam. Powered by Blogger.